Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৫ মে ২০১৭

জিল্লুর রহমান

 

কথাসাহিত্যিক জিল্লুর রহমান-এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ

 

জিল্লুর রহমান ০১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৮ খ্রি. দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা: মৃত: ইউনুছ আলী, মাতা: মোছা. মরিয়ম নেছা। মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর ধর্মপুর ইউ.সি দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি এবং দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিটিউট থেকে প্রথম বিভাগে ডিপ্লোমা-ইন-সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। পাশাপাশি বিরল কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করেন।

 

ছাত্রজীবন শেষে তিনি স্কাই টাচ এ্যাপার্টমেন্ট, বেসরকারি সংস্থা কারিতাস এবং নটরডেম কলেজে দীর্ঘ দিন কাজ করার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে যোগদান করেন।

 

লেখালেখির অভ্যাস ছাত্রজীবন থেকেই, তাঁর লেখা প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়ে দৈনিক তিস্তা পত্রিকায় .....তারপর দৈনিক উত্তর বাংলাসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়।

 

প্রথম কাব্যগ্রন্থ ছোট্ট একটি ভালোবাসা প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তারপর শুরু হয় উপন্যাস লেখা। ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম উপন্যাস ভ্যালেনটাইনস ডে। তারপর বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে একে একে প্রকাশিত হতে থাকে ০১ টি কাব্যগ্রন্থ, ০৪ টি কিশোর উপন্যাস, ১৩ টি উপন্যাস এবং ধারাবাহিক উপন্যাস গডফাদারের ০৩ খণ্ড। লেখার শুরু থেকেই বিরামহীনভাবে চলছে একের পর এক উপন্যাস।

মোবাইল-০১৭১৮১৫৭০৭৬

 

Email address       :         :writerzillur@gmail.com

Web                       :         www.writerzillur.com

facebook               :         web.facebook.com/profile.php?id=100000449437795

Blog                       :         www.shobdonir.com/writerzillur

                               :         www.somewhereinblog.net/writerzillur

                                                                                   

কথাসাহিত্যিক জিল্লুর রহমান-এর লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের বিষয়বস্তু:

গডফাদার:

            ১৯৭১ সাল। একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য কৃষক, শ্রমিক, মুচি, কুলি, কামার-কুমার জেলে তাঁতীসহ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সারাদেশের মুক্তিপাগল মানুষ কামানের গোলার সামনে হালের পেন্ডি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, একটি মানচিত্র, একটি জাতীয় পতাকা নিয়ে ঘরে ফেরে। ঘরে ফেরে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, কথা বলার স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়ে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত, অপশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে।

সেই স্বপ্ন আজ কতোটা পূরণ হয়েছে লক্ষ শহীদের রক্ত আর হাজার হাজার মা-বোনের সম্মানের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা গণমানুষকে কতোটা মুক্তি দিয়েছে তা সহজে অনুমান করা যায় যখন পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায়, থানায় থানায় ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার, প্রভাবশালী, ক্ষমতাবান লিডারদের ক্ষমতার অপব্যবহার, সন্ত্রাস, দুর্নীতির চিত্র দেখে। রাজনৈতিক দূর্বৃত্তদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে নীতিবান রাজনীতিবিদরা হারিয়ে যাচ্ছে এবং রাজনীতির মাঠ চলে যাচ্ছে রাজনৈতিক দূর্বৃত্তদের দখলে। তেমনি একজন রাজনৈতিক দূর্বৃত্তকে নিয়ে লেখা উপন্যাস গডফাদার

 

অপেক্ষা:

            টিজ করার অপরাধে ছোটনের কোনো শাস্তি হলো না, টিজ হওয়ার অপরাধে প্রায়শ্চিত্ত হলো নদীর, লেখাপড়া শিখে বড় হওয়ার স্বপ্নটা ভেঙে চুরমার হলো। বিধবা মা মান-সম্মানের ভয়ে নদীকে বিয়ে দিলো।

            নদীর জীবনে শুরু হলো নতুন সংগ্রাম। স্বামী হাজতে, ননদের বিয়ে হওয়ার পর শ্বশুরবাড়িতে সে আর তার বিধবা শাশুড়ি, বাবার বাড়িতে মা আর ভাইয়ের আবার বিয়ে করে নতুন সংসার করার চাপ। রাস্তায় বেরুলে ছোটনের অত্যাচার। সবকিছু মিলিয়ে নদীর বেঁচে থাকাই যখন কঠিন হলো তখন সে সিদ্ধান্ত নিলো ঢাকা যাবে, স্বামীর কাছাকাছি থাকবে, চাকরি করবে, সপ্তাহে একদিন হলেও মাসুদকে দেখতে যাবে কাশিমপুর কারাগারে।

            নদীর চাকরি হলো কিন্তু  এখানেও প্রতিদিন তাকে মুখোমুখি হতে হলো ভদ্রবেশি অনেক ছোটনের। তবু্‌ও নদী মাসুদের জন্য অপেক্ষা করতে চায় অনন্তকাল। হয়তো এই অপেক্ষার দিন শেষ হবে, মাসুদ কারাগার থেকে বেরিয়ে আসবে নদীর প্রতি মাসুদের সন্দেহ আর অবিশ্বাস নিয়ে। তারপর-

 

ছায়াপুরুষ:

বন্ধু এবং প্রেমিক হিসেবে পারভেজের তুলনা হয় না। স্বামী হিসেবে প্রথম প্রথম তার চালচলনও ছিলো বন্ধুর মতোই কিন্তু অল্প দিনেই পারভেজ বদলে গেলো। তন্দ্রা আবিষ্কার করলো বন্ধু, প্রেমিক এবং স্বামী পারভেজ যেন তিনটি আলাদা আলাদা মানুষ। এমনসময় তন্দ্রার পরিচয় হলো তারেকের সঙ্গে...

 

 

 

ট্রেন টু ভিলেজ

 

ওরা কোনোদিন গ্রাম দেখেনি। ঢাকায় জন্ম গ্রহণ করেছে, ঢাকায় বড় হয়েছে, একক পরিবারে। ফলে ওদের জীবনের গণ্ডি বলতে বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে সীমিত। তাই কিশোর বয়সে ওদের যেসব বিষয় জানা প্রয়োজন ছিলো সেগুলো জানা হয়নি। রকির বাবা যখন বললো গ্রাম থেকে তার তাহইতো ভাই আসবে তখন রকি আর রিতু দু’জনে হা করে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।

গ্রাম থেকে তুলি এলো মিউজিক কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করতে, তার কাছ থেকে গ্রামের গল্প শুনে রকি গ্রামে যাওয়ার জন্য আগ্রহী হলো কিন্তু একা যাবে কীভাবে? বাবা-মা কেউ রাজি হলো না, তাদের সময় নেই।

রকি তার গ্রামে যাওয়ার আগ্রহের কথা বললো তার ফ্রেন্ড টনি, জেমস আর তিথিকে। তিথি তো শুনেই আবেগ প্রবণ হয়ে পড়লো, ওয়াও। আমিও যাচ্ছি তোদের সঙ্গে।

কিন্তু গ্রামে যেতে ওদের অনেক বাধা। জেমস বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান বলে তারা জেমসকে যেতে দিলো না। তিথির গ্রামে যাওয়ার পথে বাধা হলো সে মেয়ে বলে। শুরু হলো তিথির হ্যাঙ্গার স্ট্রাইক। অবশেষে তারও একটা যাওয়ার উপায় বের হলো।

এমনিভাবে অনেক বাধা বিঘ্ন পেরিয়ে ওরা গ্রামে গেলো। সেখানে গিয়ে পরিচিত হলো অনেক নতুন ঘটনার সাথে।  মাইক্রোবাস থেকে নামতেই একটা পাঁঠা দেখে রকি আর টনির মধ্যে একজন বলতে শুরু করলো ভল্লুক, আরেকজন বললো। মাইক্রোবাস দেখে পাঁঠা জোরে দৌড়ে আসতেই রকি আর টনি দু’জনে দৌড় দিলো। ওদের এই কাণ্ড যেনো  গ্রামের মানুষের মধ্যে একটা হাসি-ঠাট্টার বিষয় হলো।

বিকেলে তুলি যখন রিতু আর তিথিকে মেহেদি পাতা তোলার জন্য ডাক দিলো তখন দু’জনে খুব খুশি হলো কিন্তু রিতু মেহেদি পাতা তোলার জন্য হাত বাড়াতেই তিথি জোরে চিৎকার করে বললো, হাত দিস্‌ না রিতু কাঁটা বিঁধবে।

সখের বশে তিথি সন্ধ্যায় শাড়ি পরলো। আর শাড়ি পরে উঠান থেকে আঙিনায় নামতেই সে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলো।

পরদিন এই ছয় জনের একদল এ্যাডভেঞ্চার প্রিয় কিশোর-কিশোরী গেলো ধর্মপুর ফরেস্টে, জঙ্গল দেখতে। জঙ্গলে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-পালা আর পশু-পাখির ছবি তুলতে তুলতে রকি আর তিথি পথ হারিয়ে ফেললো।

তিথি ভুলে মোবাইল ফোন বাড়িতে ছেড়ে এসেছে আর ছবি তুলতে তুলতে রকির মোবাইল ফোনেও চার্জ শেষ হয়ে গেছে। দু’জনের শরীরও অনেক ক্লান্ত। এখন কীভাবে জঙ্গল থেকে বের হবে সে চিন্তায় দু’জনে অসি'র হয়ে পড়লো। রকির মাথায় একটা বুদ্ধি এলো, সে জোরে জোরে টনি, টনি বলে ডাকতে শুরু করলো কিন্তু জঙ্গলের অনেক গভীরে চলে আসায় ওদের ডাক টনি, তরু, তুলি, রিতুর কান পর্যন্ত পৌঁছালো না।

ওরা নিরাশ হয়ে ক্লান্ত অবসন্ন দেহ নিয়ে পথে পথে ঘুরছিলো। এমনসময় জঙ্গলের পথ দিয়ে এক পাল শুয়োর দেখে দু’জনে ভয়ে কেঁপে উঠলো। ওরা এক গুচ্ছ ঘন ছোট গাছের আড়ালে লুকালো।

গভীর জঙ্গলের দু’জন অপরিচিত কিশোর-কিশোরীকে দেখে শুয়োরের পালকে তাড়া করে এগিয়ে এলো ফিলীপ মারন্ডী। সে রকি আর তিথিকে আশ্বস' করলো, অভয় দিলো এবং দু’জনকে পথ দেখিয়ে জঙ্গল থেকে বের করে মাইক্রোবাসের কাছে পৌঁছে দিলো।

পরদিন সন্ধ্যায় আড্ডা হলো তুলির দাদু লতিফ সাহেবের সঙ্গে। লতিফ সাহেব পঁচাত্তর বছর বয়সের একজন উচ্চ শিক্ষিত, জ্ঞান পিপাসু এবং প্রযুক্তি চিন্তা জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ। শহুরে এই চার কিশো-কিশোরী তার ফেসবুকে এ্যাকাউন্ট, ট্রেন টু ভিলেজ গ্রুপ, ব্লগে লেখা দেখে অবাক হলো। ওরা যেনো খুঁজে পেলো পচাঁত্তর বছর বয়সের এক চিরসবুজ বালককে। 

লতিফ সাহেবও অবাক হলেন যখন তিনি জানতে পারলেন ওরা কোনোদিন গ্রাম দেখেনি, গ্রামে ওদের কোনো আত্মীয়-স্বজনও নেই। এতদিন শেকড়ের টান, নাড়ির টান, মাটির টান বলে যে কথা তিনি বলতেন এই কিশোর-কিশোরীদের সেরকম কোনো টান নেই।  ফুপা সম্পর্ক কাকে বলে ওরা জানে না তখন তিনি শুধু অবাকই হলেন না কিছুটা হতবাক হলেন।

তিনি এই কিশোর-কিশোরীদের বোঝালেন এমনিভাবে গ্রামের সঙ্গে শহরের মানুষের সম্পর্ক ধীরে ধীরে ছিন্ন হচ্ছে, গ্রামের মানুষের সঙ্গে শহরের মানুষের বৈষম্য বাড়ছে। আর কয়েক প্রজন্ম পর হয়তো দেখা যাবে গ্রামের মানুষ আর শহরের মানুষ দু’টো আলাদা প্রজাতির মানুষে পরিণত হয়েছে।

লতিফ সাহেব ওদের শোনালেন তার ইচ্ছার কথা, গ্রামের অপরূপ শোভা, গ্রামের মানুষের কৃষ্টি-কালচার বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার জন্য, মানুষে মানুষে এই সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে সমাজকে সি'তিশীল করার জন্য। তিনি তাদের শোনালেন, দেশপ্রেমিক কিশোর ক্ষুদিরামের দেশ্রপ্রেমের কথা, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের কথা, মুক্তিযুদ্ধের কথা।   

 

ক্রিকেটার তূর্য (কিশোর উপন্যাস):

জীবনে সেঞ্চুরি ঐ একটাই, তারপর শুরু হলো উইকেট পতন। বাবা-মা’র ইচ্ছা ছিলো তূর্যকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা জজ-ব্যারিস্টার বানানোর। তাই তূর্যকে ক্রিকেট থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য শুরু হলো একের পর এক কোচিং আর প্রাইভেট টিউশনি। ক্রিকেটের মাঠে যাওয়ার সময়টায় যোগ হলো আরো একজন টিচার। মহল্লার সঙ্কীর্ণ মাঠে যে প্র্যাকটিসের সুযোগ ছিলো সেখানেও নির্মিত হলো মাল্টিস্টোরেড কমার্শিয়াল বিল্ডিং। ক্রিকেটের মাঠের স্থান দখল করলো সাইবার ক্যাফে, ক্রিকেটের স্থান দখল করলো ইন্টারনেটের এ্যাডাল্ট ছবি।

তূর্যর আরেক বন্ধু অর্ণব। বাবা-মা’র সাথে অর্ণবের সম্পর্কটা অনেকটা বন্ধুত্বপূর্ণ। দু’জনেই প্রযুক্তিমনা মানুষ। অর্ণব যখন ক্লাস এইট পাস করে নাইনে উঠলো তখনই বাসায় এনে দিলো ল্যাপটপ। সাইবার ক্যাফের নিষিদ্ধ এ্যাডাল্ট ছবি নয়, বাসায় বসে অর্ণব প্রতিদিন চর্চা করে তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞানভাণ্ডারের মহাসমুদ্র। সে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালো সবার উপরে।

বিত্তবান ডাক্তার দম্পতির একমাত্র সন্তান পার্থ। বাবা-মা’র অসীম অর্থ লালসার ফলে পার্থ যেন অনেকটা মূল্যহীন। তার কাছে বাবা-মা মানে প্রয়োজনের সময় টাকা-পয়সা দেয়া। তার প্রতি বাবা-মা’র কোনো আদর স্নেহ নেই, কোনো শাসন ও শৃঙ্খলার বন্ধন নেই। অতি অল্প বয়সে সীমাহীন অর্থ আর লাগামহীন স্বাধীনতা তাকে বেপোরয়া করে তুলেছে। কোচিং-টিউশনির নাম করে বাবা-মা’র কাছ থেকে টাকা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া, ক্লাসের আগে ও পরে সাইবার ক্যাফেতে বসে এ্যাডাল্ট ছবি দেখা তার একরকম নেশায় পরিণত হয়েছে। তার সঙ্গে জুটেছে তানিয়া।

তানিয়া বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান। বাবা ব্যবসায়ী, দিনরাত ব্যবসার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। মা এন.জি.ও কর্মী। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করতে করতে নিজের স্বামী-সন্তানের প্রতি অনেকটা উদাসীন হয়ে পড়েছে আর সেসুযোগে একমাত্র মেয়ে তানিয়াও পার্থর সঙ্গে সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিতে শুরু করেছে, আসক্ত হয়ে পড়েছে।

তূর্যর আরেক বান্ধবী তিশা। প্রথমদিন সাইবার ক্যাফেতে যাওয়া দেখেই তিশার বড়বোন নিশা তাকে ল্যাপটপ কিনে দিয়েছে। তথ্য প্রযু্‌ক্িতর জ্ঞানসমুদ্রের সেও একজন জ্ঞানপিপাসু নাবিক।

একদিন তূর্য সাইবার ক্যাফেতে ঢুকবে এমনসময় দেখা তানিয়ার। সে পার্থর জন্য অপেক্ষা করছিলো এমনসময় তূর্যকে দেখে তার সাথে গিয়ে সাইবার ক্যাফের সঙ্কীর্ণ সেলে বসলো। কিছুক্ষণ পর পার্থ তানিয়াকে তূর্যর সেলে দেখে ভীষণ রেগে গেলো। দু’জনে কিছুক্ষণ রাগারাগির পর পার্থ তানিয়াকে দেখে নেয়ার হুমকি দিলো।

কয়েকদিন পার্থর সঙ্গে তানিয়ার কোনো যোগাযোগ নেই। পার্থ আর সাইবার ক্যাফেতেও আসছে না। একদিন তানিয়া তূর্যর সঙ্গে ব্রাউজ করার সময় তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো তার সাথে পার্থর রোমান্টিক মুহূর্তের ছবি। সে আঁতকে উঠলো। তার পা দুটো শিথিল হয়ে এলো। চেয়ার থেকে ওঠার শক্তিও যেন সে হারিয়ে ফেললো। তূর্য কোনোভাবে তাকে ধরে রিক্সায় করে বাসায় পৌঁছে দিলো।

পুরো দিনাজপুর শহরে ঘটনাটা চাপা উত্তেজনার সৃষ্টি করলো। তানিয়ার মা তাহমিনা থানায় পার্থর নামে মামলা করলো। পুলিশ পার্থকে এ্যারেস্ট করলো। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ তূর্যকেও এ্যারেস্ট করলো। তূর্যকে এ্যারেস্ট করার কথা শুনে থানায় ছুটে এলো অর্ণব, তিশা আর তানিয়া। ওসি সাহেব প্রথমে অর্ণবের কথাকে আমলে নিলেন না। পরে অর্ণব ওসি সাহেবকে বোঝাতে সক্ষম হলো যে তূর্যকে ওপেন করে দেয়া ইমেইল এ্যাকাউন্ট থেকে পার্থই তানিয়া আর পার্থর ভিডিও ছবি আপলোড করেছে। পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দীতেও পার্থ নিজের দোষ স্বীকার করলো।

ততক্ষণে থানার সামনে মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিজ্ঞ বিচারক মামলার নথিপত্র পুংখানুপুঙ্খুরুপে বিশ্লেষণ করলেন এবং পার্থকে কারাদণ্ড দিয়ে জেলখানায় পাঠিয়ে দিলেন।

মুক্তি পেয়ে তূর্য মায়ের কোলে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। 

 

সেই ছেলেটি (কিশোর উপন্যাস):

চৌদ্দ/পনেরো বছর বয়সের কিশোর সৌরভ। শখ বিজ্ঞানী হওয়া। লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে সে কম্পিউটারে গেম খেলে, ইণ্টারনেটে ব্রাউজ করে, মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করে, কৃত্রিম গ্রহ-নক্ষত্র তৈরির চেষ্টা করে, মোবাইল ফোনের পুরাতন ব্যাটারি, প্লাস্টিকের ফ্যান আর ছোট মোটর দিয়ে ফ্যান তৈরি করে। সৃষ্টিশীল এসব কাজে অবমূল্যায়ন, মায়ের মাত্রাতিরিক্ত শাসন এবং বাবা-মা’র দাম্পত্য কলহের কারণে তার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তারপর ঘটনাক্রমে বন্দী হয় পাচারকারী চক্রের হাতে।

মোবাইল ফোনে জয়ার সঙ্গে পরিচয় হয় পিয়ালের। পিয়াল প্রেমের অভিনয় করে, জয়াকে প্রলোভন দেখিয়ে পাচারকারী চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। দু’জনের আশ্রয় হয় ছেলেধরার বন্দী শিবিরে। তারা দুজনে বুঝতে পারে ডাইনি মহিলা তাদের ভারতে পাচার করে দিবে, জয়ার আশ্রয় হবে কোনো পতিতালয়ে আর সৌরভের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে তার লাশ পড়ে থাকবে বেওয়ারিশ হয়ে। প্রতি মুহূর্তে আতঙ্ক, দু’জনে মৃত্যুকূপ থেকে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে।

একদিন তাদের নিয়ে ডাইনি মহিলা তাদের নিয়ে রওয়ানা হয় ঢাকা থেকে লালমনিরহাট দিয়ে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে। তাদের বোতলের পানির সঙ্গে মেশানো হয় ঘুমের ঔষধ। সৌরভ বুঝতে পারে, সে জয়াকে পানি খেতে নিষেধ করে এবং নিজেও পানি খাওয়া বন্ধ করে দেয়। তারা দু’জনে বাঁচার চেষ্টা করে, সুযোগ খোঁজে। বাস ফুড ভিলেজে এসে থামতেই সৌরভ চিৎকার দিয়ে উঠে। বাসের সব যাত্রী ডাইনি, মোখলেস আর তাদের ক্যাডারকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়।  

 

খুঁজে ফিরি তারে:

আরশী মোবাইলের বাটন টিপলো, দুঃখিত এই মুহূর্তে মোবাইল সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, অনুগ্রহপুর্বক কিছুক্ষণ পর আবার ডায়াল করুন।

সে মোবাইলটা বিছানার ওপর ছুঁড়ে দিলো, তোমারই বা দোষ কী? তোমার সঙ্গে তো আমি নিজেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি, তুমিই বা নতুন করে সংযোগ দিবে কেনো? তুমি কোথায় ফিরোজ? কতদিন থেকে তোমাকে খুঁজছি, কতোবার তোমার মোবাইলে রিং দিয়েছি, কোনোদিন তোমাকে পেলাম না। তোমাকে আমার খুব প্রয়োজন, তুমি আমাকে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখাতে, তুমি বলতে আমি যেদিন প্রমোশন পেয়ে অফিসার হবো সেদিন তুমিই সবচেয়ে বেশি খুশি হবে। আমি প্রমোশন পেয়েছি ফিরোজ, আগামী মাসে আমার একটা র‌্যাঙ্ক লাগবে, তুমি দেখবে না?

প্রমীর অকাল মৃত্যুর পর একমাত্র মেয়ে রিমার মুখের দিকে তাকিয়ে ফিরোজ দ্বিতীয় বিয়ের কথা কোনোদিন ভাবেনি। নীলফামারী থেকে জয়পুরহাট বদলি হওয়ার পর সে যে বাসা ভাড়া নিয়েছিলো সে বাসারই মেয়ে আরশী তখন বগুড়া আযিযুল হক কলেজের অনার্সের ছাত্রী। প্রথম দিকে ফিরোজ যখন অফিসে থাকতো তখন আরশী প্রায় সময় দোতলায় চলে আসতো, রিমার সঙ্গে কথা বলে সময় কাটিয়ে দিতো। একদিন আরশীর সঙ্গে ফিরোজের পরিচয় হয়। আরশী যেন খুব তাড়াতাড়ি ফিরোজকে আপন করে নেয়। ফিরোজও যেন তাই। অল্পদিনের মধ্যে আরশীর ভালোবাসার কাছে ফিরোজের বয়স, সরকারি চাকুরিতে তার পদমর্যাদা সবকিছুই যেন সে ভুলে গিয়েছিলো।

এমনসময় জয়পুরহাট পুলিশ লাইনে মহিলা পুলিশে নিয়োগের সার্কুলার দেখে আরশী প্রথমে ফিরোজের কাছে পরামর্শ চায়। ফিরোজ  প্রথমে আরো লেখাপড়া করার পরামর্শ দিলেও আরশীদের আর্থিক টানাটানির কথা জেনে তাকে চাকরির চেষ্টা করার জন্য উৎসাহ দেয়। ভাগ্যক্রমে আরশী মহিলা পুলিশ পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়। মহিলা পুলিশে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়ে আরশী প্রথমেই ফিরোজের পা ছুঁয়ে সালাম করে। তারপর রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে শুরু হয় ট্রেনিং। ট্রেনিং চলাকালে আরশীর সবসময় ফিরোজের কথা মনে হতো, তার মনে হতো ফিরোজই যেন তার সব। ফিরোজে জীবনেও ধীরে ধীরে প্রমীর স্থান দখল করে আরশী।    

ট্রেনিং শেষে আরশীর পোস্টিং হয় রাজশাহী জেলার বাঘমারা থানায়। আরশী প্রথমে ভেঙ্গে পড়লেও ফিরোজ তাকে সান্ত্বনা দেয় এবং সবসময় তার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়। ফিরোজ প্রায় আরশীর সঙ্গে দেখা করার জন্য  রাজশাহী যেতো, সারাদিন দু’জনে নব-দম্পতির মতো রাজশাহী চষে বেড়ানোর পর ফিরোজ আরশীর সংসারের প্রয়োজনীয় সবকিছু কিনে দিয়ে জয়পুরহাট ফিরতো।

আরশীকে মহিলা আসামি নিয়ে প্রায়ই রাজশাহী যেতে হতো। সেখানে তার পরিচয় হয় কন্সটেবল নূরের সঙ্গে। তখন নূরের পোস্টিং ছিলো রাজশাহী মেট্রোপলিটন কোর্টে। ধীরে ধীরে দু’জনের মধ্যে প্রথমে সখ্যতা গড়ে উঠে, তারপর প্রেম। নূর আরশীকে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখায়, আরশী নূরের দেখানো স্বপ্নে বিভোর হয়ে ফিরোজকে ভুলে যায়। আরশী আর ফিরোজের বিষয়টিকে আরশীর বোন-দুলাভাই অর্থ উপার্জনের একটা মোক্ষম সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে আরশীকে ফিরোজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে উৎসাহিত করে। ফিরোজ জয়পুরহাট থেকে বদলি হয়ে যায়।

নূর আরশীর সঙ্গে প্রতারণা করে। নূর-এর প্রতারণা আরশীর মনে ফিরোজের সঙ্গে তার আচরণের জন্য অপরাধবোধ জাগিয়ে তোলে। ফিরোজের সঙ্গে দেখা করার জন্য আরশী মনে মনে তাকে খুঁজতে থাকে। ইতোমধ্যে আরশীর প্রমোশন হয় এবং র‌্যাঙ্ক পরানোর দিন নির্ধারিত হয়। ফিরোজের সঙ্গে দেখা করা আরশীর জন্য আরো প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। আরশী তার বান্ধবী রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত জেসমিনের সহযোগিতায় ফিরোজের হেড অফিসের ঠিকানা বের করে। সেখানে যোগাযোগ করে জানতে পারে ফিরোজ কয়েক বছর আগে চাকরি থেকে রিজাইন করেছে। আরশী সেখান থেকে ফিরোজের ঠিকানা নিয়ে রওয়ানা হয় তার গ্রামের বাড়ির ঠিকানায়।

চাকরি ছেড়ে দিয়ে এইচ.বি.এস পজিটিভ ভাইরাসে আক্রান্ত ফিরোজ কাউকে না জানিয়ে তার একমাত্র কলেজ পড়-য়া মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নির্ধারিত দিনে রিমার বিয়ে হয়। বিয়ের পরদিন রাতেই ফিরোজ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে জরুরি ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়।

দিনাজপুরে ফিরোজের বাড়ি খুঁজতে গিয়ে আরশী এক ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলো, আঙ্কল ফিরোজ সাহেবের বাড়িটা কোনো দিকে? প্লিজ যদি বলতেন?

তিনি অদূরে আঙ্গুল দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ফিরোজের বাড়িটা তো ঐদিকে কিন্তু ও তো-

কী হয়েছে আঙ্কল?

ও তোমার কে হয় মা?

আঙ্কল ফিরোজ সাহেব আমার পরম শ্রদ্ধেয় একজন মানুষ, তাঁর এক মেয়ে আছে নাম রিমা, তিনি আমাকে রিমার মতো স্নেহ করেন। ফিরোজ সাহেব আমার গার্জিয়ানের মতো, বন্ধুর মতো, তিনিই আমার সব।

ভদ্র লোক অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বললেন, তাহলে তো তুমি সব হারিয়েছ মা।

 

পরীর স্বপ্ন (কিশোর উপন্যাস)

মেয়েটির হাসিটি খুব সুন্দর কিন্তু তার শব্দ করে হাসতে মানা, মেয়েটির কান্নার শব্দটি অত্যন্ত করুণ কিন্তু তার কাঁদতে মানা। মেয়েটির হাঁটুনিতেও একটা আর্ট আছে কিন্তু তার ঘর থেকে বের হতে মানা। মেয়েটি এখন ক্লাস এইটের ছাত্রী, আগামীতে তার জে.এস.সি পরীক্ষা কিন্তু তার স্কুল যাওয়া বন্ধ। তার সবকিছু আটকা পড়েছে পারিবারিক বেড়াজালে। সে বাসায় বন্দী, তার কাজ শুধু ঘরে বসে অপেক্ষা করা। বিয়ের জন্য অপেক্ষা। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে, তার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে চিরদিনের মতো উৎসর্গ করে সমাজের চিরাচরিত নিয়মে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে স্বামী-সংসার নিয়ে দিন কাটানোর জন্য তার শুধু অপেক্ষা।

মেয়েটির নাম পরী। ডানাকাটা পরীর মতোই সুন্দর মেয়েটি। সে যেন রূপে-গুণে অনন্যা। তিন বোনের মধ্যে পরী সবার ছোট। সেই শৈশব থেকে অবহেলা, অনাদর আর অবজ্ঞার মধ্যে বড় হয়েছে। বাবা-মা কোনোদিন স্কুলে পাঠায়নি। নিজে ব্র্যাক স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে একদিন স্কুলে ভর্তি হয়ে ক্লাস এইট পর্যন্ত এসেছে। এখন তার বাবা-মা’র মাথা ভূত চেপেছে, বিয়ের ভূত। পরীকে বিয়ে দেয়াই তাদের কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

একের পর এক বিয়ের সম্পর্ক আসছে। যেকোনো  দিন বিয়ে হয়ে যেতে পারে কিন্তু সে নিজের চোখে দেখেছে বড় বোন শাপলার কম বয়সে একে একে দু’টি সন্তান জন্ম দিয়ে তার স্বাস'্য ভেঙ্গে গেছে আর সেজন্যই তার দুলাভাই আরেকটা বিয়ে করেছে।

মেজো বোন নূরী। তারও বিয়ে হয়েছে অল্প বয়সে। দুর্ভাগ্যক্রমে সন্তান প্রসবের সময় সে মারা গেছে।

 

চোখের সামনে একে একে দু’বোনের করুণ অবস্থা, ব্র্যাক স্কুলে লেখাপড়া আর ব্র্যাক কিশোরী ক্লাবে যাতায়াতের ফলে তার চোখ খুলে গেছে। পরী স্নেহ, আদর, যত্নে বড় হওয়া কোনো সাধারণ কিশোরী নয়। সে এখন মেয়েদের লেখাপড়া জানার সুফল, অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক অবস্থা জানা কিশোরী। তাই সে পথ খুঁজছে তার বিয়ে প্রতিরোধ করার।

কয়েক দিন স্কুলে না পেয়ে একদিন পরীর বান্ধবী মালা এলো। মালাকে সে তাকে এখান থেকে উদ্ধার করার কৌশল বলে দিলো। তার পরামর্শ মতো মালা কাজ করলো।

একদিন ব্রাকের এক নারী কর্মী তার বাবা-মা’কে বোঝালো কিন্তু কোনো কাজ হলো না। তারা পরীর বিয়েতে অনঢ়। তারপর এলো মহিলা মেম্বার। সে পরীর বাবা-মা’কে বাল্য বিবাহ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধের কথা জানালে তারা ভয় পেলো।

পরীর স্কুল যাওয়া আবার শুরু হলো। পরী ভেবেছিলো সে বুঝি বাল্য বিবাহের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেলো। কিন্তু তার ধারণা ভুল। এবার তার বিয়ের আয়োজন শুরু হলো গোপনে, তার ফুপুর বাড়িতে। পরী এসব কিছুই জানতো না। একদিন পরীর মা তাকে নিয়ে ফুপুর বাড়িতে গেলো। পরীর ফুপুর কোনো ছেলেমেয়ে নেই। সে পরীকে খুব স্নেহ করে। পরী ভেবেছিলো ফুপু তো প্রায়ই তাকে নিয়ে যায় আবার ঘন ঘন তাদের বাড়িতে আসে। কিন্তু পরী তার ফুপুর বাড়িতে গিয়ে পড়লো আরেক ষড়যন্ত্রের মধ্যে।

বিয়ে ঠিক হয়েছে তারই ফুপুর দেবরের ছেলের সঙ্গে। দিনের বেলা কোনো কথা নেই। সন্ধ্যার পর শুরু হলো বিয়ের আয়োজন। তেমন কোনো ধুম ধাম নেই। বরের বাড়ি পাশেই। এই দু’বাড়ি আর প্রতিবেশীসহ দশ বারো জন লোকের সমাগম হলো। প্রথমে পরী বুঝতে পারেনি কিন্তু যখন বুঝতে পেরেছে তখন আর পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

পরীকে বর পক্ষের লম্বা-চওড়া এক মহিলা একরকম জোর করে বিয়ের শাড়ি-গয়না পরালো, তাকে উঠানে এনে বসালো। নতুন বউকে দেখার জন্য সবাই তাকে ঘিরে ধরলো।

কাজি সাহেব আঙিনায় সাজানো চেয়ারে বসে তার রেজিস্টারে বর-কনের নাম ঠিকানাসহ রেজিস্টারে সবকিছু লিখে ফেলেছে। কিছুক্ষণ পর কাজি সাহেব সাক্ষী হিসেবে তার সঙ্গে আরো কয়েকজন লোক আঙিনা থেকে উঠানের কাছে এলো। তারপর কাজি সাহেব বর কনে উভয়ের নাম ঠিাকান বলে জিজ্ঞেস করলো, আপনি রাজি আছেন?

কাজি সাহেব এ প্রশ্নের না উত্তর জীবনে শোনেনি। তার ধারণা পরী কম বয়সের একটা মেয়ে হয়তো কাঁদতে কাঁদতে বলবে, হুঁ।

কিন্তু তা হলো না। পরী উঠে দাঁড়ালো, কোমরে শাড়ির আঁচল বেঁধে দু’হাত কোমরে রেখে দাঁতে দাঁত চেপে জোরে চিৎকার দিয়ে বললো, না।  

 

বিজয়িনী

 

রাতের আঁধারে সবুজ যেদিন রাতে শঙ্কর মাধবপুর গ্রাম থেকে পালিয়ে এলো সেদিন শীতের রাত, ঘুটঘুটে অন্ধকার, শঙ্কর মাধবপুর গ্রাম থেকে রাজিবপুর পৌঁছাতে পায়ে হাঁটার পথ তিন কিলোমিটার, উঁচু-নিচু রাস্তা, ধুধু বালু চর আর কাশবন। তারপর  সোনাভরি নদী। মনের ভিতরে আছে কেউ দেখে ফেলার আশঙ্কা। এতকিছুর মধ্যেও সবুজের মনে হলো একবার যদি রেণুর মুখটা দেখে যেতে পারতো...

সালিসের ভয়ে, সালিসে অপমানের ভয়ে সে রাতের আঁধারে পালিয়ে এসেছে ঢাকায়। একটা চাকুরীও জুটেছে গার্মেন্টসে। কিন্তু গার্মেন্টসে চাকুরীতে তার মন নেই। তার মনের মধ্যে সবসময় রেণু, আর শুধু রেণু।

সেদিন সবুজ পালিয়ে যাওয়ার পর রেণুও চলে যায় নানার বাড়ি চিলমারী। ক’দিন যেতে না যেতেই শুরু হয় তার বিয়ের আয়োজন। রেণু নানার বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে হয় রিয়াজের সঙ্গে। রিয়াজ বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান। পাকা বাড়ি, অন্ন-বস্ত্রের অভাব নেই। ব্রম্মপুত্রের চরে ক্ষুধা তৃঞ্চার সঙ্গে লড়াই করে বড় হওয়া রেণু এখন মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহ বধু। তারপরও রেণুর মনে সুখ নেই। তার মন শুধু সবুজের জন্য ছটফট করে।

এর মধ্যে ঘটে আরেক ঘটনা। রিয়াজ রেণুকে নিয়ে বেড়াতে আসে শঙ্কর মাধবপুর গ্রামে, শ্বশুরবাড়িতে। আর বেড়াতে এসেই হয় যত বিপত্তি। সে রেণুর প্রতিবেশীদের মাধ্যমে জানতে পারে রেণুর সঙ্গে সবুজের হৃদয়ঘটিত সম্পর্কের কথা। সে রেণুকে তার বাবার বাড়িতে রেখে পরদিনই পালিয়ে যায়। রেণুও পরের নৌকায় ব্রম্মপুত্র পাড়ি দিয়ে চলে যায় পিছনে পিছনে রেণু চলে যায় তার শ্বশুরবাড়ি কিন্তু  সম্পর্কটা আর আগের মতো স্বাভাবিক হয় না। রেণুর ওপর শুরু হয় মানসিক নির্যাতন। নির্যাতন সইতে না পেরে রেণু তার বাবার বাড়ি চলে আসে। ক’দিন পরেই চলে আসে বিচ্ছেদের চিঠি, তালাকনামা।

রেণুর বড় বোন বানু। কিশোরী বয়সে তারও বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু  সতীনের সংসারে টিকতে না পেরে সেও ফিরে এসেছিলো বাবার বাড়িতে সে অনেক আগের কথা। তারপর সে চলে যায় ঢাকা, সেখানে গার্মেন্টসে চাকুরী করে বাড়িতে মাসে মাসে টাকা পাঠায়, তাদের দুর্দিন কেটে যায়, সংসারে সুখ আসে।

রেণু বাবার বাড়িতে ফিরে এলে সেও বানুর সঙ্গে ঢাকা গিয়ে বানুর সঙ্গে গার্মেন্টসে চাকুরী করে। দু’মেয়ের চাকুরীর টাকায় সংসার আরো সচ্ছল হয়।

বানু, রেণু আর ইতি। নুরুর তিন মেয়ে আর একমাত্র ছেলে মানিক। ইতি মেধাবী ছাত্রী। সে যখন ক্লাস ফাইভ পাস করে হাই স্কুলে ভর্তি হবে তখনো বানুর চাকুরী হয় নি, রেণু শ্বশুরবাড়িতে। তখন তাদের টানপোড়েনের সংসার। মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও আর্থিক সঙ্গতির অভাবে নুরু তার লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু  শঙ্কর মাধবপুর হাই স্কুলের হেড মাস্টারের পরামর্শ আর আশ্বাসের ফলে সে ইতিকে ক্লাস সিক্সে ভর্তি করে দেয়।

ইতি আর মানিক জমোজ। নুরুর একমাত্র ছেলে, বানু, রেনু, ইতির একমাত্র ভাই হওয়ায় সে বড় হয়েছে অনেক আদর যত্নে। ক্লাস ফাইভ পাস করার পর সে জিদ ধরলো রাজিবপুর হাই স্কুলে ভর্তি হবে। নুরু তাকে রাজিবপুর হাই স্কুলেই ভর্তি করে দিলো। কিন্তু  রাজিবপুর ভর্তি হওয়ার পর সে লেখাপড়ায় আরো পিছিয়ে গেলো।



COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon